রমজান মোবারক।

সকাল ৯টা থেকে ৫টা অফিস টাইম। রমজান মাস এসেছে কিন্তু পরিবর্তন নেই। অফিস থেকে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরিবারের সাথে ইফতার পালন করেন। যাইহোক, যতই ক্লান্তি থাকুক আল্লাহ তায়ালার এই বরকত ময় মাসে নামাজ-রোজা পালন করতে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি। ছোট ছেলেটা বড় হচ্ছে, বাবার সাথে সময় কাটাতে চায়।

আজ শুক্রবার, অফিস নেই, ছুটি। তিনি ভাবলেন আজ বাহির থেকে ইফতার বাজার করা হোক।ছেলেকে নিয়ে গেলেন ইফতার বাজারে। যথারীতি পছন্দসই খাবার নেওয়া হলো। একটু দেরি হয়ে গেল মনে হয়। রিক্সাতে উঠে ছেলেটা দেখতে পাচ্ছে রিক্সাচালকের পিছনে কাপড় টি ছেড়া। ছেলেটি রিক্সা থেকে নেমে জিজ্ঞেস করল,"আপনি ইফতার করবেন নাহ?" প্রতি উওরে তেমন কিছু আসেনি। ছেলেটি বাবাকে বলে উঠলো উনাকে আমাদের সাথে ইফতার করতে বলি? বাবা একটু ইতস্তত বোধ করলো। রিক্সাচালক নিজ থেকেই বলে উঠলো,"না বাবা, তুমি করো। আমিও করে নেবো।" এই বলে সে চলে গেল।

1618346609675.jpg

বাসায় এসে ছেলে ছেলের মতো মেতে উঠলো মায়ের সাথে। কিন্তু তার বাবার মাথায় এখনো মিলছে নাহ কি হয়েছে। তার ছোট্ট ছেলেটি বুঝতে পেরে ওই রিক্সা চালকের দুর্দশা কিন্তু সে ওই মুহূর্তে কেন ইতস্তত হয়েছিল সেটির কোনো প্রতিউত্তর খুঁজে পায়নি। হঠাৎ ছেলেকে নিয়ে আবার বেরিয়ে পরলেন। তিনি অন্য একটি রিক্সা নিয়ে দক্ষিণ পাড়ার দিকে ছুটে যাচ্ছেন। কারণ তিনি দেখেছিলেন হাফিজ মিয়াকে ওই রিক্সাতে উঠতে যিনি এই সময়ে ওই এলাকায় ই যাবেন।

ছোট্ট ছেলেটি এগিয়ে গেল সেই রিক্সা চালকটির দিকে। দুহাতে এগিয়ে দিল দুটি ব্যাগ। যার একটাতে ছিল ইফতার এর জন্য কিছু খাদ্য সামগ্রী এবং অন্যটি তে তার বাবার কিছু কাপড়-চোপড়। রিকশাচালক তার বাবার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো। ইফতার এর সময় হয়ে যাচ্ছে তারা দ্রুত বাড়ির দিকে ফিরে যাচ্ছেন। ছেলেটি বুঝতে পারল না, তার বাবা আবার কেন ফিরে আসলো।তার বাবা এখন একটু প্রশান্তি পেয়েছে। এক অজানা অপরাধ বোধ কাজ করছিল তখন যেটি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। রিক্সা থেকে নেমে এখানে রিক্সাওয়ালার হাতে বাড়তি ১০০ টাকা গুঁজে দিয়ে বললো,"ইফতার এর সময় হয়েছে এখন কিছুক্ষণ রিক্সা না চালিয়ে ইফতার টা করে নিবেন আর আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।"


রমজান মাস শুরু হয়েছে। খুব মূল্যবান একটি সময়। ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের মধ্যেই এ মাসের সার্থকতা। উপরের গল্পটি একটি রূপক গল্প। এরকম বিবেক আমাদের সকলের নাড়া দেওয়া উচিত। ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু গুলোর মাঝে যেমন ধনী-গরিব এসব ভেদাভেদ এর অনুভূতি নেই আমাদের উচিত অন্তত এ মাসের উছিলায় এরকম ইতস্তত বোধ দূর করে তাদের প্রতি আমাদের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যে যার জায়গা থেকে সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিলেই সবকিছু অনেক সুন্দর দেখাবে।

আমি মনে মনে নিয়ত করেছি আমি আমার সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। সবাই নিজেদের মাঝে এরকম ছোট ছোট পদক্ষেপের মনস্থির করলে আমাদের চারপাশে এই রমজান মাস টি আরো বরকত ময় হয়ে উঠবে। রমজান মোবারক, আশা করি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের পরিবারকে রহমত প্রদান করবেন।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
1 Comment
Ecency