নতুন জামা

আব্বা ঈদের তো বেশি দিন বাকি নাই এবারো কী নতুন জামা দিবানা? হ দিমুনি রিকশার টায়ার ঠিক করতে করতে জবাব দে গনি মিয়া। তা কবে দিবা, আব্বা? কৌতুহলী পাল্টা প্রশ্ন করে রাফি।

রাফি গনি মিয়ার চার সন্তানের ভিতর বড় সন্তান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। তার বাকি দুই ভাই বোন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর একজন তিন মাসের। পরিবার পরিকল্পনার কথা ওনাদের মাথায় থাকেনা। ওনাদের কথা হলো মুখ দিয়েছেন জিনি আহার দিবেন তিনি।

রাফি স্কুলের পাশাপাশি তার বাবাকেও সাহায্য করে সাইকেল, রিকশা ঠিক করার কাজে। গনি মিয়ার সাইকেল সারাইয়ের দোকান। গ্রামের সবাই মিকার মানে ম্যাকার বলে ডাকে। রাফি ভাবে যদি তার আব্বা পড়ালেখা জানতো তাহলে কেউ তার আব্বাকে মিকার বলে তাচ্ছিল্য করতোনা, সবাই ইন্জিনিয়ার বলে ডাকতো বর তাকে বলতো ইন্জিনিয়ারের ছেলে বলে!

রাফি তার আব্বাকে কাজে সাহায্য করতে করতে কিছুক্ষণ পর পর নতুত জামার কথা বলেই যাচ্ছে। পরে গনি মেকার রাগ করে ছেলে দমক দিয়ে বলে দিমু বলছি না!! শুন তুই তো বড় হইছত তোট ছোট ভাই বোন আছেনা তাদের কথা একবার ভাবছত? তাই তো সেতো বড় হয়ে গেছে এখন, গরিব ঘরের ছেলেরা একটু আগেই বড় হয় মানে বয়স হওয়ার অনেক আগেই ওদেরকে অনেককিছুর সাথে মানিয়ে চলতে হয় বড়দের মতো করে।

এইভাবে ঈদও গনিয়ে আসে। রাফি আর তার আব্বাকে নতুন জামার কথা বলেনা। গনি মেকার বুঝতে পারে তার ছেলের মন খারাপ। পরেরদিন সে বাজারে যায় সবার জন্য কম বেশি কিছু না কিছু কিনে কিন্তু সবার জন্য কিনতে গিয়ে দেখে তার পকেট শূন্য প্রায়।

বাজার থেকে ফেরার পর সবাই মগো রাফিও খুশি কিন্তু যখন শপিং ব্যাগে যখন ওর বহুল প্রতাশিত জামা পাওয়া গেলোনা তখন এট মতো মন খারাপ আর কিছুই হয়না। কী করবে সেতো বড়!!

যাক গনি মেকার তাকে বুঝিয়ে বললো বাবা আগামীকাল গিয়ে তোর জন্য নতুন জামা নিয়ে আসবো মন খারাপ করিসনে বাবা। রাফি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো ঠিক আছে আব্বা।

ঈদ আসলে গিন মেকারদের আয় রোজগার ও বাড়ে। কারন, গ্রমে শহর থেকে অনেক লোক আসে তাদপর ছেলেমেয়েরা সাইকেল বাড়া নে কেউ সাইকেল সারিয়ে নে।

পরেরদিন সারাদিন কাজ করে ভালোই আয় করে গনি। বিকাল বেলায় বাজারে গিয়ে সারাদিনের কামানো টাকা দিয়ে ছেলের জন্য সুন্দর একটা শার্ট কিনে। কিছু টাকা অবশিস্ট থাকে। পরে কী মনে ঐ টাকা দিয়ে নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবি ও কিনে ফেলে গনি।

রাফি নতুন জামা পেয়ে বেশ খুশি, ঈদের তো আরো দুই দিন বাকি চারদিকে রোগ জীবাণু। তোর শার্ট আর আমার পাঞ্জাবি ধুয়ে দি বাকিদেরটা তে ধোয়া হয়ে গেছে। ঠিক আছে আব্বা, বলে শায় দে রাফি। শার্ট আর পাঞ্জাবি একসাথে ধুতে গিয়ে দেখে শার্টের রঙে পাঞ্জাবির বিভিন্ন যায়গায় ছোপ ছোপ রং লেগে গেছে। এই দৃশ্য দেখে রাফির মন খারাপ হয়ে গেছে। ওর শার্টের জন্য ওর আব্বার পাঞ্জাবি নষ্ট হলো।

রাফি দৌড়ে গিয়ে ঘরে ডুকে মাকে বলে মা তোমার কাছে আনার যে ৫০০ টাকা আছে ঐযে সাইকেলে ঠিক করার জন্য মাস্টার দাদর নাতি আমাকে দিছিল সে টাকাটা দাও। মা বলে কী করবি? আব্বার পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে গেছে নতুন কিনতে হবে। গনি আর তার বউ এর চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।এই জল আনন্দের কিংবা দায়িত্ব বোধের অথবা সম্পর্কের।
Source Pixabayk44u23.jpg

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
10 Comments
Ecency