আকাশ ছুঁয়ে

কনক কয়টা ছাই দে, মাছগুলো একটু কেটে রান্নাটা ছড়িয়ে দি। তুইতো এখন বড় হইছত রান্নাবান্না টা শিখে নে কনককে তার মা রেবেকা বলে। মা আমি পড়ালেখা করতে চাই বড় মানুষ হইতে চাই এইসব রান্নাবান্না আমার ভালো লাগেনা কনক তার মাকে বলে।
তেলাপিয়া মাছের কানকো বের করতে করতে রেবেকা বলে শুন মেয়ে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েতো আর পুরুষালী করলে চলবেনা, তোকে পড়ালেখা করতে কে নিষেধ করছে, পড়ালেখার পাশাপাশি রান্নাবান্না শিখে রাখাও সমান জরুরী, কে জানে কখন কোনটার দরকার পড়ে। যখন দরকার হবে তখন শিখে নিবো এখন এতো ঘ্যান ঘ্যান করোনা কনক মাকে ছাই দিতে গিয়ে পাল্টা কথা শুনিয়ে দে।

মাকে মাছ কাটার জন্য ছাই দিয়ে পড়তে বসে, টানা দুই ঘন্টা পড়ে কনক তার একটাই লক্ষ্য পাইলট হওয়া। আকাশে মেঘ করছে, ঘনকালো মেঘ, যে কোন মুহুর্তে বৃষ্টি শুরু হবে। কনক বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে। বৃষ্টি শুরু হলে কনক ছাদে চলে যায় বৃষ্টিতে ভিজতে।

কাক ভেজা হয়ে বাসায় ডুকতে রেবেকা কথা শুনিয়ে দে কনক কে। এখন বড় হইছিস এখনতো একটু চালচলন তোর পরিবর্তন করা উচিত। আর এটা তো সরকারি কোয়ার্টার তোদের গ্রামের বাড়ি না, কথাটা তোর মনে থাকেনা? তোকে না বলছি ছাদে গিয়ে ভিজবি না! কথা কানে যায়না? রেবেকার প্রশ্নের কোন জবাব দেয়না কনক। সে জানে তার মা বকবকানি এমনিই থেমে যাবে, শুধু শুধু উত্তর দিয়ে মুড নষ্ট করা যাবেনা।

কনকরা দুই বোন, বড় বোন তমা সে ডাক্তার তার বিয়ে হয়ে গেছে আরেক ডাক্তারের সাথে। তমা তার বরের সাথে থাকে ঢাকায়। কনকের বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কনক, তার বাবা-মা সহ থাকে সরকারি কোয়ার্টারে।

রেবেকার মা ছাড়া তাদের দুই বোনকে তার বাবা কোনদিন ও বকা দেয়নি, তার বাবা শুধু ওদের দুই বোনকে বলতো এমন কিছু করোনা লোকে দেখে হাসবে, এমন কিছুই করো যাতে করে সবাই তোমাদের নিয়ে ভাবে। জীবনে কিছু হওয়ার ছেয়ে মানুষ হওয়া অনেক বড়, তাই আগে মানুষ হও।

কনক ভাত খেয়ে যা, কিছুক্ষণ পর কনকের ডাক পড়ে দুপুরের খাওয়ার জন্য। খাওয়ার টেবিলে বাপ মেয়ে রাজ্যের গল্প জুড়ে দে। রেবেকা কনককে বকা দিয়ে বলে তোর না দুইদিন পর আইএসএসবি পরিক্ষা? পরিক্ষা তো কী হলে, শুনো বড় পরিক্ষার আগে যতোটা হালকা থাকা যায় ততোটাই মঙ্গল। শুনো মা, বাবা বলে মনের কথা শুনো, আমিও পরিক্ষায় আমার মন যা চায় তাই করবো।

পরেরদিন কনক আর তার বাবার সাথে আইএসএসবি পরিক্ষা দিতে যায়, যথাসময়ে পরিক্ষা শেষ হয় এবং প্রাথমিক পরিক্ষায় ইয়েস কার্ড দেয়া হয় কনককে। এবং তাদেরকে বলে দেয়া হয় যারা ইয়েস কার্ড পেলো তারা যেনো নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়ে দ্বিতীয় সিলেকশন বোর্ডে এসে রিপোর্ট করতে এবং পাঁচদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আসতে।

কনক নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়ে রিপোর্ট করে, তাদের সাথে চল্লিশ জনের মতো ছাত্রছাত্রি, সবাইকে গ্রুপ করে দেয়া হয়, মেয়েদেরকে মেয়েদের সাথে, ছেলেদের ও আলাদা আলাদা গ্রুপ।

কনক এখানে এসে বুঝতে পারে তার মা অমূলক ভুল ধরে না। যাক সে বুঝতে পারছে এখানে চোখ কান খোলা রাখার পাশাপাশি মনের কখা শুনা অতি জরুরী। কনক সাফল্যের সাথে পাঁচ দিন কাটিয়ে দে এবং গ্রিন কার্ড পায়, যদিও ওর সাথে চল্লিশ জনের ভিতর মাত্র ছয়জন গ্রিন কার্ড পায়।

বাসায় গিয়ে কনক মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা আগামী মাস থেকে তোমার মেয়ের পাইলট হওয়ার মিশন শুরু হবে, তুমি খুশি তো? যা পাগলি খুশি হবোনা কেন, তাহলে তুমি কাঁদছ কেনো, আরে এটা খুশির কান্না, মা হলে তুই ও বুঝবি কনক কে আস্বস্ত করে রেবেকা।

Source Pixabay
img_0.47178933483495306.jpg

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
5 Comments
Ecency