টিকটিকির ডাকে আমার রাত

টিকটিকির ডাকে আমার রাত

20210724_125625.jpg

টিকটিকির ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। নিঝুম রাতের নীরবতা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। রাত তখন তিন টা। এমন গভীর রাতে ঘরে থাকা ঘড়ির সেকেন্ডের কাটাটাও যেন অনেক শব্দ করে চলে। সেখানে জোরে চিৎকার করে ডাকা এক টিকটিকির শব্দে ঘুম যে কারো ভেংঙে যাবে। ডিম লাইটের হালকা আলোতে সাদা দেয়ালে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে টিকটিকি টিকে। আর এই টিকটিকির ডাক শুনে সারা দিলো ড্রেসিংটেবিলের পিছনে থাকা আরেক টিকটিকি। আমি বিছানায় শুয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে তাদের কান্ডগুলো দেখছিলাম। একজন আরেকজনের ডাকে এমন ভাবে সারাদিচ্ছে যেনো মনে হচ্ছে তারা দুজন স্বামী - স্ত্রী। আবার প্রেমিক প্রেমিকাও বলা যেতে পারে।

কিন্তু তারা দুজন একজন আরেকজনকে দেখেও একসাথে হলো না তাই তাদের সম্পর্কের মিলটা করতে পারলাম না। ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু ঘুম সে আসলেই বড্ড বেঈমান। যদি একবার চলে যাই তাহলে সহজে আসতে চাই না। উঠে বসলাম আমি , কারণ ততক্ষনে আমার ঘুম মামার বাড়ি চলে গেছে। বিছানার পাশে থাকা জানালার ধারে এসে সতর্ক হাতে জানালার একটা পাট খুললাম। পাশের রুমে থাকা আম্মু যেন কোনো শব্দ শুনতে না পাই। জানালার একটি পাট খুলতেই বদলে গেলো আঁধারে ঢাকা আমার ঘর। বাহিরে লাইটপোস্টের আলো এসে পড়েছে আমার মুখের উপর ও কিছুটা আমার রুমের ভিতর।

বাহিরে বৃষ্টি পড়ছে। এই বৃষ্টি এখন থেকে না সেই সন্ধ্যার পর থেকেই ঝরছে। ক্ষান্ত হয়নি এখনো। শুরুতে ছিল বড় বড় ফোঁটা। আর এখন গুঁড়িগুঁড়ি। বাতাসের কারণে হালকা ধোঁয়াটে। বিন্দু বিন্দু ফোঁটাগুলো ঝলমল করছে সেই লাইটপোস্টের আলোতে। তখন মনে হচ্ছিলো অনেক দিন পর আমি দেখার মতো কিছু দেখছি। যা অনেক টাকা নষ্ট করে কোনো এক বরফের দেশে ঘুরতে গেলে এমনটা দেখা যাই। আর এভাবে নিজের ঘরে বসে এত সুন্দর কিছু দেখার জন্য চোখ ও মন দুটাই থাকতে হয়। এগুলো ভাবতে ভাবতে যেন আমি হারিয়ে গেলাম অন্য এক ভুবনে।

মনে পরে গেলো আমার সেই বোনের কথা। তার সাথে কাটানো পাঁচটি বছর। একটা সময় একই রুমে সে আর আমি একসাথে থাকতাম। এমন কিছু রাত গিয়েছে আমরা সারারাত ঘুমাইনি। দুষ্টামি করে রাত পার করে দিয়েছি। এমন বৃষ্টির দিনে জানালার দিকে তাকিয়ে একজন আরেক জনের কতনা মনের কথা বলেছি। তুমি এখন নেই এই আমার কাছে। তুমি চলে গেছো আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। আজ প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে তোমাকে দেখিনা আমি। একটা সময় এই তুমি আমাকে প্রমিস করেছিলে তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। সবসময় আমরা দুজন একসাথে থাকবো। কিন্তু তুমি তোমার দেয়া সেই কথা রাখতে পারলে না।

আরো দুই বছর আগেই আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু বিয়ে না বিয়ের পর চলে গেছে অনেক দূরে সেই চট্টগ্রাম। তার স্বামী বলেছিলো তারা ঢাকায় থাকবে কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তারা তাদের নিজেদের বাড়ি চট্টগ্রামে চলে গেছে। এখন আর ইচ্ছা হলেই হুট করে আসতে পারে না। এভাবেই জানালার কাছে বসে থেকে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো আমার। আর সেই টিকটিকি গুলোর উপর একটু রাগ হলো আমার। আমার এত সুন্দর ঠান্ডায় ঘেরা রাতটাকে নষ্ট করে দিয়ে চলে গেলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম কাল সকাল হলেই এই টিকটিকি গুলোকে যে ভাবেই হোক আমার ঘর থেকে বের করতে হবে।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
3 Comments
Ecency