রাই-কিশোরী অমনিবাস-১ অপ্রাপ্তির প্রজাপতি

সুহৃদ,

অবাক হয়ে উপলব্ধি করলাম, এখনো তুমি আমার কাছে আগের মতই অনুভূতো হও।
আজো তোমার মুখোমুখি হলেই, কেবলই ধরা পড়ে যাওয়া চোরের মত আমি একা একাই লজ্জিত, রঞ্জিত হই।
তখন আমার মনেই থাকেনা, তুমি জানোনা আমার অনুভূতির রঙ কেমন, চেনোনা আমার ভালবাসাকে। তাই আন্দাজও করতে পারোনা আমার লজ্জায় বিব্রত অভিব্যক্তিদের।

এই যে এতবছর পর যখন আচানক তোমার মুখোমুখি হলাম, আমি সেই আগের মতোই বিব্রত, লজ্জিত, রঞ্জিত ছিলাম।
সে মুহুর্তে আমার মনেই ছিলোনা, আমি মধ্য তিরিশ পেরিয়ে সংসার নিয়ে সুখী হওয়া এক রমণী। আমি যেনো দেখতেই পাচ্ছিলাম না টকটকে সিঁদুর পরে তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরেক রমণী!
সর্বোপরি আমি আবারো ভুলেই গিয়েছিলাম, তোমাকে আমার বলাই হয়নি আমার সে সুতীব্র অনুরাগের কথা।

তাই তুমি যখন হেসে বললে " আরে রাই! কেমন আছো?"
সেই চিরাচরিত হাসি দেখে, সেই হাস্যজ্জ্বোল মুখে বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া নামটা শুনে, আমার যত কেতাদুরস্ত ভাব, চটপটে অভিব্যক্তি, প্রাঞ্জল বাগ্মীতা; সব কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো এক নিমিষেই!
আমি এমনকি পাল্টা কুশল জিজ্ঞাস করতেও ভুলে গিয়েছিলাম!
ভেবে এখন মরমে মরে যাই।
কী ভাবলে বলোতো তুমি! কেবলই মনে হচ্ছে নাক উঁচু, ঔদ্ধত্যে ভরা অবজ্ঞা ভেবে মনে কষ্ট পেলে কিনা! সম্ভবত এই অপরাধবোধ থেকেই তোমাকে আজ লিখতে বসা।

কি জানোতো, তোমাকে ভালবাসার কথা আমার কদাপি ছিলোনা।

আমার যাকে ভালবাসার কথা ছিলো, তোমার মাঝে তার কিছুই ছিলো না। অথচ দুষ্টুমির ছলে কখন ভালবাসা হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।
টের পেলাম যখন, বড্ডো দেরি করে ফেলেছি তখন! তবে মজার ব্যাপার হলো, তোমাকে ভালবেসে কেমন শান্তি লাগে।
অনেকটা যেনো ভালবাসাটা "সুপাত্রে দান" করা হলো ব্যাপার!
যদিও মাঝে মাঝে বুকটা চিনচিন করে উঠে অপ্রাপ্তির বেদনায়।

কিন্তু তবুও, তোমাকে ভালবেসেই আমি ভীষণ সুখী অনিরুদ্ধ।

যখন বয়স কম ছিলো, কল্পনার ফানুসে যখন ইচ্ছেমত তোমাকে জড়ানোর অধিকার ছিলো, তখন আমি তোমার রাই কিশোরী হবো ভাবার পাপও করেছি জানো!

তোমার বেখেয়ালি আঙুলের ছোঁয়া! মনে হয়েছিলো বিদ্যুৎ ছুঁয়েছি।
চুপিসারে সিঁথি জুড়ে টকটকে লাল সিঁদুর, কপালে বড় লালটিপ পরে আয়নায় দেখতাম!
বান্ধবীরা তা জেনে জাত-গেলো, কূল-গেলো বলে সে কি ধিক্কার আমাকে!

স্রষ্টার উপর খুব অভিমান করে বলেছিলাম,
"দুনিয়াজুড়ে কিনা তোমার ইনাকেই মিললো আমার এত সাধের ভালবাসার অর্ঘ্যের জন্য? কেনো বাপু ? সারাজীবন এই অপ্রাপ্তি নিয়ে থাকবো কি করে বলো দিকি!"
কিন্তু এই দেখো, দিব্যি থেকে যাচ্ছি। কেটে যাচ্ছে দিন, মাস, বছর।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে তারপর থেকে ভাবা ছেড়ে দিয়েছিলাম বলেই বুঝি জীবন কেটেই যাচ্ছে তার নিয়মে।
শুধু তোমাকে না বলার অপ্রাপ্তি থেকে আজ মুক্তি নিচ্ছি।
বলতে চাচ্ছি- তোমাকে ভালবাসতে পেরে আমি কতটা সুখী।
তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে তোমার হাসি দেখে আমি সুখী।
তোমার পাশে সিঁদুর পরিহিতা রমণীকে দেখেও আমি অসুখী নই।
শুধু বহুদিন পর অপ্রাপ্তির পুরাতন চিনচিনে ব্যাথাটা শ্বাস আটকাবার উপক্রম করছিল।

আমি সেদিন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম খুব করে, "আমার চোখে কি কখনো ভালবাসা দেখেছো? দেখে কি দেবতার মত অহংকারী হয়েছো নাকি অবাক হয়েছো? নাকি কিঞ্চিৎ মায়া লেগেছে তোমার দস্যি স্নেহেশীষের ছেলেমানুষীর প্রতি!

চিঠি বড্ড ষড়যন্ত্রকারী এক ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে নানান দোচাটনে পড়ে অবশেষে লিখেই ফেললাম। বহুদিনের পোড়াতে থাকা অব্যক্ততা উজাড় করে ঢেলে দিলাম। আশা করি অনাহূত এ অর্ঘ্য তোমায় খুব বেশী বিপদে ফেলবেনা!
photo_2022-04-19_18-47-56.jpg #RaiAnirudhha
গ্রহণের আশা বা নিগ্রহের ব্যর্থতা আমাকে আর ছোঁবেনা অনিরুদ্ধ। তাই এ নিয়ে ভেবোনা।

তুমি ভালো থেকো। আমার ভালো থাকায়ও কোনো অসুবিধে হয়না।

ইতি,
রাই-কিশোরী

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now