উত্তরটা আমার জানা ছিল না !

সেপ্টেম্বরের শুরতে আমরা বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাই সিলেটে । উদ্দেশ্য ছিলো ক্লান্তি দূর করে নিজেদেরকে সতেজ রাখা। সিলেটে তিন দিন ঘুরা শেষে সেদিন রাতে ছিল আমাদের বাড়ি ফেরার পালা। আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরবো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ট্রেনের টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলাম। আমাদের ট্রেন সিলেট থেকে রাত ১১.৩০ মিনিটে ছেরে যাবে। সেই অনুযায়ী আমরা সারা দিন ঘুরা শেষে সন্ধ্যা ৮ টার মধ্যেই পৌঁছে যাই সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে।

স্টেশনে সময় কাটানোর জন্য আমরা রেলস্টেশনের বসার জায়গাগুলোকে বেছে নেই। বন্ধুরা মিলে স্টেশনে বসে যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন একটি মেয়ে হঠাৎ করে এসে বললো, ভাইয়া ৫ টা টাকা দিবেন! মেয়েটা বয়সে অনেক ছোট ছিল। তার চাহনি আর মুখের দিকে তাকিয়ে আমারা না করতে পারলাম না। আমরা বন্ধুরা মিলে তাকে কিছু টাকা দেওয়াতে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

1632752557468.jpg

আমরা সেদিন সিলেট থেকে পরিবারের জন্য কিছু চকলেট কিনে নিয়েছিলাম। মেয়েটা আমার বন্ধুর হাতে চকলেট দেখে বললো , ভাইয়া একটা চকলেট দিবেন ? মেয়েটার চকলেট খাবার ইচ্ছা পূরণ করতে আমি আর আমার বন্ধু গিয়ে পাশের দোকান থেকে একটা চকলেট কিনে দিলাম। চকলেট পেয়ে মেয়েটা তো মহাখুশি। খুশিতে সে গিয়ে তার বন্ধুদের ডেকে বলতে থাকে, “এই ভাইয়ারা আমাকে চকলেট কিনে দিয়েছে আবার টাকাও দিয়েছে" । এবার বাকিরাও বায়না ধরতে থাকে তাদেরকে কিনে দেওয়ার জন্য। পরে বাকিদের কেও কিছু কিনে দিলে ওরা কিছুক্ষণ পর চলে যায় কিন্তু থেকে যায় মেয়েটি।

ভ্রমনে আমরা একটি ফুটবল নিয়ে গিয়েছিলাম, যেটা দেখে মেয়েটি বললো , “ভাইয়া আমার সাথে ফুটবল খেলবে "? ছোট মেয়ে, চাইনি ওর মন খারাপ হোক। তাই ওকে ফুটবলটি দিলাম খেলা করার জন্য। ফুটবল নিয়ে মেয়েটি কিছুক্ষণ খেলা করে আবার আমাদের পাশে এসে বসে।

কিছুক্ষণ পর একটি ছেলে আসলো কিছু খাবার নিয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, এক আপু কিনে দিয়েছে। সবাই মিলেমিশে খাবে বলে এখানে নিয়ে এসেছে ৷ তাদের মধ্যে এত মিল দেখে সত্যিই অনেক আশ্চর্য হয়েছিলাম সেদিন। ছেলেটির মনের দিক থেকে অনেক বড় ছিল, সে আমাদেরকে বললো, ভাইয়া আপনারও খান আমাদের সাথে। আমি অবাক হয়ে শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। প্রায় আধাঘন্টা পর ছেলেটি চলে গেলেও আবারও থেকে যায় মেয়েটি।

1632752557461.jpg

1632752557452.jpg

আমার বন্ধুরা ওর সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি বলে - পাশেই একটি বস্তিতে থাকে । বাবা-মায়ের সামান্য আয়ে পরিবার ঠিক মত চলে না তাই রাস্তায় সে। ওর কথা শুনে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়, ভাবতে থাকি ওদের জীবনটা কতই না কষ্টের। এরমধ্যেই ও আমার বন্ধু তাইজুলের কাছে ওর সানগ্লাসটা পরে দেখার আবদার করে। বন্ধু আমার অনেক ভালো মনের মানুষ, সে সানগ্লাসটা মেয়েটিকে উপহার দিয়ে দেয়। মেয়েটির সাথে আমাদের সময় ভালই কাটছিল, তারই মধ্যে সময় হয়ে যায় আমাদের ট্রেন ছাড়ার। আমারা ট্রেনে উঠে পড়লে মেয়েটি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করে , " ভাইয়া - আবার কবে আসবেন?"

আমরা তার এই ছোট প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারিনি সেদিন। কিছুক্ষণ পর আমাদের ট্রেন ছেড়ে দিলে, মেয়েটি আমাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমার মনে হচ্ছিল কি যেন ফেলে যাচ্ছি আমি! পিছনে ফিরে তাকাতেও অনেক কষ্ট হচ্ছিল । শুধু কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না সেদিন।

ওই মেয়েটির কথা এখনো খুব মনে পড়ে আমার । জীবনে কখনো সুযোগ পেলে এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে চাই । এখন শুধু একটাই চাওয়া এই মানুষগুলো ভালো থাকুক।
image source

image.png

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
8 Comments
Ecency