গ্রামে বাড়ি ফেরা ও প্রথম মাছ ধরতে যাওয়ার স্মৃতিচারন।

সুস্বাগতম, বন্ধুগন এবং কমিউনিটি মেম্বারগন। কেমন আছেন সবাই?
আশা করি ভালো আছেন এবং মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সুস্থ আছেন।
করোনাকালীন এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, এ জন্য দয়াময়কে ধন্যবাদ জানানো উচিত আমাদের সবার।

বেশ কিছুদিন পর আবার আপনাদের সামনে কিছু লিখতে আসলাম৷ আসলে আমার রিসোর্স ক্রেডিট খুব অল্প থাকায় লিখতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল আরকি।

সবার কেমন দিন কাটছে, ঘরে বাইরে যাপিত জীবনে??
আমার তো ভালোই চলছে, মাঝে মাঝে খানিকটা হতাশা কাজ করা আর জীবনে তেমন কোন অগ্রগতি না থাকায় একটু আধটু স্ফূর্তিহীন হওয়া বাদ দিয়ে বেশ ভালো থাকার চেষ্টা করে চলেছি।
আসলে জীবন যখন যেখানে যেমন, ঠিক সেখানে তেমন ভাবে মানিয়ে নেওয়ার কসরত করে বেড়াচ্ছি যাতে মানসিক শান্তি বজায় রাখতে পারি।
তো, এই বেশ কিছুদিন ধরে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে একটু উপন্যাসের বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা,বিকেল বেলায় কড়া লিকারে নিজে চা বানিয়ে টিনের চালে টুংটাং শব্দে বিভোর হওয়া, বৃষ্টি কমলে হাঁটতে বেরিয়ে সন্ধ্যা অবধি মাঠঘাট দাপিয়ে বেড়ানো, গাছের কচি পেয়ারা পেড়ে লবন-মরিচের সাথে খাওয়া,কাছের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি কাজে শান্তি খোঁজার চেষ্টায় আছি।

বেশ কিছুদিন হলো গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, শহর ছেড়ে গ্রামে এসে বেশ শান্ত আর হাঁফছাড়া লাগছে।শহরের জীবনে কেমন যেন একটু চাপের আর মানসিক অবসাদের অনুভূতি তৈরি হয়, আর গ্রামে ফিরে এলে সেই ভার নেমে যাওয়ার একটি ভাব এসে পড়ে।

ও, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।হঠাৎ করে গ্রামে এসে যখন পুকুর ঘাটে গেলাম তখন, পুব দিকের তালগাছটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অদ্ভুতুড়ে গা ছমছমে ভাব চলে এসেছিল গতকাল।আর তার সাথে ৩ বছর আগে বর্ষাকালে ক্ষেতে মাছ ধরতে যাওয়ার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
আর কোন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আপনাদের ঘটনাটার কথা বলছি।

তখন বর্ষার মৌসুম, টানা ১০- ১১ দিনের বৃষ্টিতে মাঠঘাট এক হাঁটু পরিমান পানিতে ডুবে আছে।গ্রামের কাঁচা রাস্তায় অল্প পানি।
আমাদের গ্রামে পুরো জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুকুর আছে, গ্রাম ছেড়ে কিছুদূর যদি হেঁটে যাওয়া যায়, তাহলে চোখে পড়বে বিশাল খোলা খেত আর চাষের জমি, জমির পাশ দিয়ে সুরসুর করে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা খাল, তার পাশে জঙ্গলঘেরা গাছপালা আর কাঁটালতার সারি।
এতো সুন্দর আমাদের গ্রামটা যে দেখলে মনে হবে ছবির মতো কোথায় যেন এসে পড়েছি।

images (1).jpeg
Src
যা হোক,আমার এক চাচাত ভাই থাকতো আমাদের বাড়ির পাশেই,বয়সে আমার চেয়ে বড়, আমরা সবাই রহিম ভাই বলে ডাকতাম।
আমি যখনই গ্রামে আসতাম সবসময় ওনার সাথে বিভিন্ন ছোটখাট এডভেঞ্চারে যেতাম,এই একটা বিষয় আমার খুব ভালোই লাগতো, শহর থেকে ফিরে কবে গ্রামে যাবো, রোমাঞ্চ কাজ করতো এই এডভেঞ্চারগুলোর কারনে।
যখনই বাড়ি ফিরতাম,রহিম ভাই এসে আমাদের খোজ খবর নিতো,কুশল বিনিময়, দেখা সাক্ষাৎ, এ বিষয়গুলোতে ওনার জুড়ি মেলা ভার,অন্য চাচাত ভাইদের থেকে সবচেয়ে অন্তরঙ্গ ছিলেন উনি আমার সাথে।

একদিন বর্ষার দিন সন্ধ্যায় মুড়ি মুড়কি, চা পরোটা খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন পেরিয়ে সেচের ঘরের চৌহদ্দিতে শান বাঁধানো একটি বসার জায়গায় গিয়ে বসলাম, রহিম ভাই আমার সাথে বসে গল্প করছিলেন। ঐ সেচ ঘরের পাশ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা কিছুদূর চলে গিয়ে পাকা রাস্তায় মিলেছে। বিভিন্ন বিষয়ে গল্পটল্প সেরে যখন আমরা কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম,তখন কাঁচা রাস্তাটা দিয়ে আমার আরেক চাচাত ভাই বাবুল এদিকে আসছিল৷
সে আমাদেরকে বসতে দেখতে পেয়ে কাছে আসলো,আমি তখন কুশল বিনিময় করলাম। রহিম চাচা বললো, বাবুল, তুমি বাড়িতে যাও।আমার ঘর থেকে খাটের পাশে রাখা চলটা(কোচ জাতীয় মাছ ধরার যন্ত্র) আর ডুলা (মাছ রাখার পাত্র এক প্রকার) নিয়ে আসো।সাথে টর্চটা নিয়ে আসো।তাড়াতাড়ি আসবা, দেরি করোনা, আমরা আজকে মাছ ধরতে যাবো।

আপনাদের বলছি, যারা গ্রামে থাকেন, বা থেকেছেন কখনো, তারা নিশ্চয়ই মাছ ধরার অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত।
যারা জানেন না, তাদের বলছি, এই মাছ ধরতে সন্ধ্যার পর থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত ঘুরঘুর করা, এই ক্ষেত থেকে ঐ ক্ষেতে চল ফেলার মধ্যে যে কি ভালোলাগা,তা নিজে অনুভব না করলে, বলে বোঝানো যাবে না।
এভাবে মাছ ধরা একটা নেশার পর্যায়ে চলে যায়, যেমন ব্লগিং যারা করি,তাদের যেমন দিনে একটা ব্লগ না লিখলে ঘুম আসেনা, তেমনি। হা হা 😅।

তো,বাবুল যথারীতি ৫ মিনিটের মাথায় সবকিছু নিয়ে একদম পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে আসলো।সাথে কিছু গুড় মুড়ি চিড়া একটা পলিথিন থলেতে করে নিয়ে এলো।
ছেলেটার বুদ্ধি ছিল,মাছ ধরতে ধরতে খিদে পেলে, মাঝরাতে তো আর বাড়ি যাওয়া যাবে না। তখন এক মুঠো, দুই মুঠো করে চিড়া গুড় চাবানো যাবে।আমাদের সবার সাথেই একটা করে পানির বোতল ছিল।

images (2).jpeg
Src
যেই ভাবা, সেই কাজ, মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।সবার থেকে আমার বেশি রোমাঞ্চ হচ্ছিল কারন আমি নতুন গ্রামে এসেছি এবং বেশ কয়েকবছর আগে বেড়াতে এসেছিলাম, মাঝে বেশ কিছুকাল বিরতি।
সন্ধ্যার সময় সেচঘরের পাশ দিয়ে ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে লাগলাম, আমি মাঝখানে, বাবুল সামনে, রহিম ভাই পেছনে, তিনজনের সাথে তিনটা চল, দুটো ডুলা হাতে দুজনের, টর্চ মেরে মেরে মাছ দেখতে লাগলাম।
প্রথম দিকে দেখলাম, টাকি মাছ, খৈয়া খলিশা মাছ,কৈ মাছ, ট্যাংরা মাছ ইত্যাদি পানির একটু উপরে ভাসমান।আমি চল হাতে ধরে পানিতে নিক্ষেপ করলাম, প্রথম কয়েকটা শট মিস গেল, কারন আমার টার্গেট ঠিক ছিল না।
পরে পদার্থবিজ্ঞানে আলোর প্রতিসরনের স্নেলের সূএ ও অপটিকাল (optical medium and refractive location) থিওরির কথা মনে পড়ে গেল।ভাবলাম, মাছটা যে অবস্থানে দেখা যায় আপাতত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে অবস্থানে নেই। তাই, মাছের ৩ ইন্চি সামনে নিখুঁত নিশানা ছাড়লাম, তারপর থেকে আধ ঘন্টার মধ্যে ডুলার অর্ধেক পুরা হয়ে গেল।
বাহ! কি আনন্দ, জীবনে এতো মাছ আগে ধরিনি।বাবুল, রহিম ভাইদেরও ডুলা প্রায় ভর্তি। মাছ ধরতে ধরতে রাত হয়ে গেল।
প্রথম দিন ভাবলাম, আর মাছ ধরার দরকার নেই, যথেষ্ট হয়েছে।এবার ফিরে চলা যাক বাড়িতে। এই ভেবে বাড়ি ফিরে চললাম।

বাড়ি ফিরে তো সবাই খুশি, মাছগুলো কেটেকুটে রেঁধে মাছের ঝোল রান্না করা হলো।মায়ের রান্না আর মাটির চুলার ধোঁয়া ওঠা তরকারির মধ্যে যে স্বাদ, তা শহরের হাজারটা রেস্টুরেন্টের স্বাদের চেয়ে গরীয়ান।তার কথা আর কি বলবো।

এ হলো, জীবনে প্রথম চল হাতে মাছ ধরার একটি অভিজ্ঞতা। আরেকদিন বলবো,মাছ ধরতে যাওয়ার আরেকটি ঘটনার ব্যাপারে।

সবাই ভালো থাকবেন,
সুস্থ থাকবেন।
এই কামনা করি।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Ecency