View full version

গল্প হলেও সত্যি....

3f2618eadd6bb08c2b80dc951c3805b4.jpg
Pic

ছেলেটা এমন কেন? একটু ভালো হলে কি হতো । ২০১৩ সালের প্রথম দিকে আমাদের পরিচয়। পরিচয়টা হয়েছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। নরমালি যেমন হয় হাই/হ্যালো – এভাবেই শুরু হয়েছিল আমাদের কনভারসেশন। প্রথম প্রথম একদম-ই পাত্তা দিতাম না ওকে, ভালই লাগতো না। চেহারা দেখলেই মনে হতো এই ছেলে তো বিশ্ব ফ্লার্টবাজ। সবার সাথে ফ্লার্ট করে বেড়ায়। কিছু দিনের মধ্যেই আমার ভাবনার সাথে তার কাজের মিল পাওয়া গেল। ব্রেড-বাটার বাদ দিয়ে কথার মধ্যে বাটার দেয়া শুরু করলো সে। ডিজগাস্টিং লাগতো সব কিছু। একটা ছেলে এতো চীপ কিভাবে হয় মাথায় -ই আসে না। তবুও কেন যেন রোজ তার টেক্সটের রিপ্লাই করতাম। এমনি করতাম কারন ছিল না কোন । আর কারন থাকবেই বা কেন... অন্য কারো সাথে কমিটেড ছিলাম আমি। সে-ও জানতো আমি এংগেজড কিন্ত এসবে তার কিছু যায় আসে না। তার কাজ সে করেই যাচ্ছে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে পরিচয় হলেও অরিজিনালি আমরা পাশাপাশি-ই থাকতাম। কিন্ত কখনো দেখা হয় নি। ছেলেটা কখনো একবারের জন্যও বলেনি দেখা করার কথা। ১ বছর হয়ে গেছে কিন্ত এখনো ফোনেই কথা হয় নি আর দেখা তো দূরের কথা শুধু টেক্সট-ই হতো। আমি মনে মনে চাইতাম একবার দেখা হোক কিন্ত বলিনি কখনো। ওয়েট করছিলাম ওর বলার জন্য। ফাইনালি একদিন সে বলেই ফেললো..

তুমি কি ভয় পাও আমাকে?

ভয় পাব কেন আজব।

বিকেলে চা খাবা?

চা খাই না আমি।

আমি খাব তুমি তাকিয়ে দেইখো। আমি ওয়েট করবো বিকেলে তোমার বাসার সামনে।

আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই নেট অফ করে দেয় ও। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে কল দিলাম। ও বললো আমি আসতেছি দেন আমি আর তুই যাবো। ভালোই হলো , একা যেতে হবে না এট লিস্ট। ছেলেটাকে দেখতে তার প্রোফাইল পিকচারের মতোন-ই। হাইটে আমার থেকে কম। ছবি দেখেই মনে হয়েছিল এমন হবে। আমাকে দেখে তার প্রথম কথা

শোন, আমি দেখতে ঠিকঠাক না হলেও আমার চয়েজ কেমন এটা মেবি নিজেকে দেখেই বুঝতেছো।

পাগল নাকি সে কি বলে এগুলা। ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম কেউ কোন কথা না বলে। দেন আমি বললাম অনেক হইছে আমি বাসায় যাবো । আজব ছেলেটা কিচ্ছু বললো না। আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে বাসায় চলে আসলাম। এটা ছিল আমাদের প্রথম দেখা ২০১৫ তে। তারপর থেকে ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে। চমৎকার গান করে ছেলেটা। মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে গান শোনাতো আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। গান শেষে বলতো ব্রেকাপ করতেছ না কেন? সে কি আমার মতো গান শোনায় তোমাকে? আমার মতো ভালবাসে?

তুমি আমাকে ভালবাসো?

ধুর কি বলো ভালবাসবো কেন? আমি তো টাইম পাস করতেছি তোমার বাবার সম্পত্তির লোভে।

কি আজব ছেলেটা। বুঝি-ই না সে আসলে চায় কি। কি করতেছে আমার সাথে কে জানে। তারপর আমাদের কমন সার্কেল তৈরী হলো। কিছুদিন পর পর-ই হ্যাং- আউট হতো। ফোনে কথা বলাও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এভাবেই চলতে থাকে সব। একদিন সকালে আমার ফোনে abroad-র কোন একটা নাম্বার থেকে কল আসে। কল পিক করতেই শুনি

কিরে ঘুম থেকে উঠছিস? আজ এতো সকালে ঘুম ভাংলো?

ভয়েস টা চিনতে দেরী হলো না আমার। আবার ও নাম্বার টা চেক করলাম। নাহ ঠিক-ই তো আছে বাইরের কান্ট্রির নাম্বার।

গতকাল রাতে আমার ফ্লাইট ছিল। তোকে বলার সাহস পাই নি। তোর ভয়েস শুনলে আসতে পারতাম না....

কিছু না বলেই ফোন কেটে অফ করে দিলাম। খুব রাগ হচ্ছে কষ্ট-ও হচ্ছে। এমন কেউ করে? আর কখনো কথা বলবো না। ব্লক করে দিলাম সব জায়গা থেকে। ঐ দিন রাতেই আমার একটা ফ্রেন্ডকে আমার বাসায় পাঠায় সে এবং আমাকে বোঝাতে বলে। কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায় সব। জানতে পারি সে ৩ বছর পর আসবে। আমি কখনোই তাকে বলিনি আসতে। মাঝে মাঝে নরমালি কথা হতো এটুকুই। ৭ মাস পর হঠাৎ একদিন অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।

কই তুই? আমি ওয়েট করতেছি। তাড়াতাড়ি আয়।

আমার উওর না শুনেই কেটে দেয়। আমি কল ব্যাক করি সে বলে এখন কি আমার নাম বলতে হবে তোমাকে নতুন করে? আসো... আমি রেডি হয়ে বের হয়ে দেখি ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।

আগের থেকে একটু সুন্দর হইছো বেশী না।। চলো আজকে রিক্সা দিয়ে ঘুরবো সারাদিন।

সবসময়ের মতো আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই হাত ধরে রিক্সায় তুলে দিলো আমাকে। আমি যে কেন তাকে কিছু বলতে পারি না......