দুই বছর পরে বাড়িতে ঈদ করলাম

IMG_20210721_121235721~2.jpg

ঈদ শেষ হইছে চার দিন হয়ে গেলো। প্রায় দুই বছর পরে বাড়িতে ঈদ করলাম। করোনার কারণে বাড়িতে ঈদ করতে আসতে পারিনাই। অনেকেই করোনার ভিতরেও অনেক রিস্ক নিয়ে বাড়ি গেছে। গত লকডাউনে বাস ট্রেন সব বন্ধ ছিলো কিন্তু এর পরেও মানুষ ঈদ করতে বাড়িতে গেছে। এতো রিস্ক নিয়ে আম্মা আমাকে বাড়িতে যেতে না করে দেয়। কিন্তু বাড়ি ছাড়া বাহিরে ঈদ করতে মোটেও ভালো লাগতো না। এবার ইদের আগে বাস ট্রেন সব খুলে দিছে। ভাইয়া আর আমি আগে আগে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসছি।

IMG_20210721_081020984~2.jpg

এবারের ঈদটা আগের ঈদ গুলো থেকে অনেক সাদামাটা ছিলো। আগের ঈদ গুলোতে ভোরে আব্বা ঘুম থেকে উঠায় দিতো। ফজরের নামাজ পরে গোসল করে ফেলতাম। ঘুম থেকে না উঠলে কিছুখন পরপর এসে ধমক দিয়ে যেতো। তারাতারি উঠে পর গোসল করে নে। নামাজের সময় হয়ে যাবে। পরে আর সময় পাবিনা। আমরা সবাই এরপরেও আস্তেধীরে উঠতাম। ছোট থেকেই বেশির ভাগ ঈদ আমাদের নানুর৷ বাড়িতেই করা হতো। মামারা প্রতি বছর ঈদ করতে আসতো। প্রতি ঈদেই কোন না কোন খালা আসতো। বাড়িতে সকালে গোসলের জন্য ভালোই একটা চাপ থাকতো। আমাদের সবার তাড়াহুড়া শুরু হয়ে যেতো শেষ মুহুর্তে। আর এদিকে আব্বার চিল্লানো সকাল থেকে সবাইকে বলতেছি কিন্তু কারো কোনো মাথা ব্যাথা নাই আর এখন সবার তারাহুড়া। সবাই কোন ভাবে গোসল শেষ করে নামাযের উদ্দেশ্য বের হয়ে যেতাম। ছোট মামা সবসময় দেরি করতো। নামাযে যাবার সময় আমি সবসময় আব্বার পাশে হেটে হেটে যেতাম। আব্বার বয়স হয়ে গেছিলো হাত ধরে নিয়ে যেতে ও আসতে হতো। এবারের ঈদে নামাযে যেতে আমি সবার থেকে দেরি করে ফেলি। সবাই চলে যাবার পরে একা একা বাসা থেকে হয়ে ঈদগাহ মাঠের দিকে যেতে থাকি। আব্বার কথা অনেক মনে পরতেছিলো। গত ঈদেও যদি বাড়িতে আসতে পারতাম তাহলে আব্বার সাথে আর একটা ঈদ করতে পারতাম। ঈদগাহ মাঠে যাবার পরে শুধু মনে হচ্ছিলো আব্বা পাশেই আছে নামায শেষে কোলাকুলি করবো। নামায শেষ করে বাসায় সবার সাথে ফিরলাম। বারবার মনে হয় পাশে দিয়ে আব্বা হেটে যাচ্ছে।

IMG_20210721_120510432.PORTRAIT~2.jpg
নামায শেষে বাসায় আসার পরেই কুরবানী নিয়ে মোটামুটি একটা তারাহুড়া শুরু হয়ে যায়। এবার ঈদে তেমন কিছুই বুঝতে পারিনাই। নামায শেষে বাসায় এসে সবার জন্য বিরিয়ানি রান্না করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিচে কুরবানি দেখার জন্য গেলাম। যেয়ে দেখি খাসির কাজ মোটামুটি শেষ। গরুতে কিছুখন আগে হাত দিছে। ছোট বেলায় সব কাজিনরা কুরবানির সময় দাঁড়ায় থেকে দেখতাম। মামা, নানি,খালা, আমাদের সবার কুরবানী একসাথে দেয়া হতো। অনেক গুলো
গরু ছাগল থাকতো। ছেলেরা গরুর পা ধরতাম লাথি খাওয়ার অনেক রিস্ক থাকতো। ছাগল ধরতে তেমন ভয় করতো না। মাংস অল্প কিছু কাটা হয়ে গেলে বাসাতে রান্নার জন্য নিয়ে যেতো। সবাই মাংস কাটার জন্য বসে পরতাম। কে কতটুকু মাংস কাটতে পারতো তার একটা প্রতিযোগিতা চলতো সবার মধ্যে। আমি সবার থেকে বেশি মাংস কেটে ফেলতাম। কাজিনরা কিছুখন কাজ করার পরেই উঠে চলে যেতো কিন্তু আমি শেষ পযন্ত থাকতাম। মাংস কাটাকাটি আমার অনেক ভালো লাগতো। সবকিছু কাটাকাটি হয়ে আসলে মাংস ভাগ করা হতো। মামাদের মাংস মামারা নিজেরা ভাগ করতো। আর নানি তার মাংস ভাগ করার দায়িত্ব সবসময় আমাকে দিতো। আব্বা আর আমি সব প্যাকেট করতাম। বাড়িতে ফকির মিসকিন যারা আসতো তাদের আম্মা মাংস বিলিয়ে দিতো। নিজেদের মাংস ফ্রিজে রেখে দিয়ে আব্বা আর আমি আশেপাশে আত্মীয় স্বজনদের বাসায় মাংস নিয়ে যেতাম। সারাদিন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় যেতো। এবার তেমন কোন ব্যস্ততা অনুভব করিনাই। মোটামুটি কাজ করে বিকালের দিকে বন্ধুদের সাথে বাইক নিয়ে বের হলাম। বিলের দিকে যেয়ে প্রায় রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম। ছোট বেলায় ঈদ এ যে পরিমান মজা করতাম বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদ আসলে আর কোন কিছুই মনে হয়না।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
Join the conversation now
Ecency