দুপুরের পরে ফোন আসলো। ঢাকা থেকে সিনিয়র ভাই আপুরা ঘুরতে আসছে ক্যাম্পাসে। বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। পুরাতন কলাতে গিয়ে সাথে ডিপার্টমেন্টের আরও অনেক জুনিয়র আছে। সবাই একসাথে আড্ডা দিতেছে। আমিও তাদের সাথে মিলিত হলাম। পুরো ক্যাম্পাসে এতো জায়গা থাকতে আমরা সবসময় এই জায়গাতে এসেই বসি। অন্য কোথাও বসে এতো শান্তি পাইনা যতটা এখানে পাই। জীবনের সবথেকে ভালো সময়গুলোর একটা মুহূর্ত এখানেই কাটিয়েছি। এখানে বসলে পাশেই লেক লেক দেখা যায়। প্রায় সবসময় বাতাস থাকেই এখানে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এখানে কিছুক্ষণ বসে থাকলেও শরীর মন সব জুড়িয়ে যায়।
অনেক্ষন এদিকে থাকার পরে হঠাৎ আপু বললো তোরা সবসময় এদিকেই বসিস। আর কি কোন জায়গা নাই? চল অন্য কোথাও যাই আজকে। ক্যাম্পাসে এতদিন পরে আসছি এদিকেই বসে থাকবো নাকি? সবসময়তো এদিকেই বসি। তখন সবাই মিলে ঠিক করলাম সুইমিংপুলের দিকে যাবো। অদিকে অনেক দিন যাওয়া হয় না। এতদুরে যেতে অনেকেই রাজি হলো না। কিন্তু যেতে না চাইলেও সবাই সুইমিংপুলের দিকে হাঁটা শুরু করলো। তখন আমার একটা ফোন আসলো সেন্টার ফিল্ডে একটু যেতে হবে। বাইকে করে আমি মাঠের দিকে রওনা হলাম আর সবাই কে বললাম শহীদ মিনারের কাছে আসলে ফোন দিও চলে আসবো।
মাঠের পাশেই সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ। এই জায়গাটা আমার অনেক পছন্দের। আমার জীবনের সেরা সেরা কনসার্ট আমি এখানেই দেখেছি। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মুক্তমঞ্চে সব সময় প্রোগ্রাম লেগেই থাকে। হঠাৎ মনে পড়লো কতদিন এখানে কনসার্ট দেখি না। আর মনে হয় কখনো দেখাও হবে না। করোনার কারনে কবে যে খুলবে কে জানে।
কিছুক্ষণ পরে ফোন দিয়ে বললো ওরা শহীদ মিনারের কাছাকাছি চলে আসছে। তখন আমরা মুক্তমঞ্চ থেকে হাঁটা শুরু করলাম। তখন আমি মোবাইল বের করে ছবি তোলা শুরু করলাম। আকাশ আর চারিপাশে এতো গাছপালা, অনেক গাছে আবার ফুল ফুটে রয়েছে। এতো সুন্দর লাগছে সবকিছু যে আমি ফ্রেমবন্দী করতে লাগলাম।
এই জায়গাটাতে দ্বিতীয় বর্ষে অনেক টা সময় কেটেছে। তখন ঢাকা থেকে ক্লাস করতাম। ক্লাস শেষ করে বাস ধরার জন্য এখানে চলে আসতাম। বাসের গেটে ঝুলে যাওয়ার যে মজা অনেক দিন পাইনা।
এই রোড সোজা বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে চলে গেছে। প্রথম বর্ষে সারারাত যখন ক্যাম্পাসে ঘুরতাম তখন সবাই রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে অথবা সুইমিংপুলে যেতে চাইতো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে চলে যেতাম কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু এখন শুধু সামনে দেখছি আর ভাবছি আরও কতদুর হেটে যেতে হবে।
আশেপাশে দেখতে দেখতে সুইমিংপুলের কাছে চলে আসলাম। এখানে আসলে আমার প্রথম মনে পরে একবার ঝড়ের রাতে ক্লাসের সব বন্ধুরা এদিকে ছিলাম। সেদিন অনেক মজা করছিলাম। প্রায় সারারাত বাহিরে থেকে ভোরের দিকে হলে চলে গেছিলাম।
ঐ যে দূরে মনপুরা দ্বীপ দেখা যায়। ঐ দ্বীপে যেতে হলে অনেক ঘুরে যেতে হয়। সামনের লেকে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে। কাঁদা কাঁদার জন্য অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। আমি ক্যাম্পাসে ভর্তির প্রায় পাঁচ বছর পরে ঐ দ্বীপে গেছি। অনেক সুন্দর জায়গাটা। আরেকদিন আপনাদের সাথে মনপুরা দ্বীপের পরিচয় করিয়ে দিবো। আশা করি ছবি গুলো আপনাদের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে।