ফ্লাট নং ১৪ (প্রথম পর্ব)

রাত তিনটার সময় যদি কোন মহিলার কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে কেমন লাগবে আপনার বলুন তো? বিরক্ত লাগবে? হ্যাঁ, তা লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর যখন দেখবেন আশেপাশে কেউ নেই, আবার তার থেকে বড় কথা ও বাসাতে আপনি একাই থাকেন, তখন হয়তো ব্যাপারটা বিরক্তি থেকে অন্য দিকে রূপ নেবে। তেমনি হয়েছে রূপক সাহেবের সাথে।

রূপক আজিজ সোহেল। খুবই সাধারণ নাম। তেমনি সাধারণ একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি করেন তিনি। জীবনটা বড় সাদামাটা তার। বয়স কেবল ২৯ এ দাঁড়িয়েছে। তবে এখনো বিয়ে-টিয়ে করেননি। এতদিন একটা রুম একাই ভাড়া নিয়ে থাকতেন রূপক সাহেব। কিছুদিন আগে তার প্রমোশন হয়েছে। তো পরে তার শখ হল এখন থেকে পুরা একটা ফ্লাটে একাই থাকবেন। কিন্তু ঢাকা শহরে একটা ফ্ল্যাট এ একা থাকা তো আর কম খরচের ব্যাপার নয়। তার ওপর রূপক সাহেবের যে খুব বেশি ইনকাম তাও নয়। তো যাই হোক, বাসা খোঁজা শুরু করলেন তিনি। একে একে অনেক বাসাই দেখলেন কিন্তু বাসার সব পছন্দ হলেও তা কোন ভাবেই নিতে পারছেন না। কারণ বেতনের অর্ধেকের বেশি যদি একটা বাসা ভাড়া দিয়ে চলে যায়, তার নিজের জন্য আর কিছুই থাকে না। তার ওপর গ্রামেও তাকে টাকা পাঠাতে হয় বৃদ্ধ বাবা মার জন্য।

টা টানা ১০ দিন খোঁজার পর একটা পুরনো আট তালা বিল্ডিং এর খোঁজ পেলেন রূপক সাহেব। অনেক আগের বিল্ডিং হলেও আট তলা হিসেবে খারাপ নয়। শুধু লিফট নেই। বিল্ডিং এর দারোয়ানের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে ১৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি খালি আছে যেটা আসলে সাত তলায়। পরপর সাত তলা উঠে রূপক সাহেবের পা চলছিল না। কিন্তু তাও একটু কম টাকাতে যদি একটু ভালো থাকা যায় এই লোভ আর কয়জন সামলাতে পারে? পুরনো বিল্ডিং হিসেবে সাততলার 14 নম্বর ফ্লাটটি যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখে মনে হয় না যে এখানে কেউ কখনো বসবাস করত। তো ফ্লাটটি দেখেই পছন্দ হলো, তার উপরে একদম পানির দাম।কম ভাড়া হিসাবে তেমন কোন সমস্যা নেই। তো বাসা নেওয়াটা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে, তাই তিনি কনফার্ম করে নিলেন।

অক্টোবরের ২ তারিখে নতুন বাসায় উঠলেন রূপক সাহেব। গোছাতে গোছাতে এক দুই দিন লাগলো। বাসাটা বেশ ভালই লাগছে ।একা একা জীবন ভালোই কাটছে মনে হয়। কিন্তু একটা জিনিস তার অবাক লাগে। বিল্ডিংয়ে এত মানুষ কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলে না। শুধু প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়, আবার প্রয়োজন শেষ হলে ঘরে ফিরে আসে। বিল্ডিংয়ের মানুষগুলোর মুখে যেন কোনো হাসি নেই। একটু অবাকই হলো নতুন বাসায় আসার পর। নতুন বাসায় আসার দুইদিনের মাথা থেকেই অস্বাভাবিক কাজকরবার হওয়া শুরু হল। প্রথমে রূপক সাহেব তেমন পাত্তা দেয়নি কিন্তু জিনিসগুলো যখন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে তখনই ধীরে ধীরে পাত্তা দেওয়া শুরু করলেন।

একদিন সকালবেলা তিনি ব্রেকফাস্ট করার জন্য পাউরুটি আনলেন । পাউরুটি প্যাকেট খুলে প্লেটের উপর রাখলেন আর জেলি আনার জন্য রান্নাঘরে গেলেন। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে এসে হঠাৎ করে দেখলেন তার পাউরুটি পুরো রক্তে ভেসে চুপচুপ করছে। কোথা থেকে রক্ত আসলো উনি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তার উপরে পুরা বাসায় উনি একাই থাকে। ব্যাপারটা দেখে তার পাউরুটি খাওয়ার প্রতি রুচি চলে গিয়েছিল। এখনো উনি ঠিকমতো পাউরুটি খেতে পারেন না।

রাত ১.৩০ টার সময় আবার একদিন বিড়ালের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল তার। কিন্তু চোখ খুলে কোন বিড়াল দেখতে পেলেন না। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে গেলেন , তখন আবার বিড়াল এর ডাক। তারপর হুট করে দেখেন তার পায়ের কাছে একটি কালো বিড়াল ডাকছে। খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুটা ভয় পেলেন প্রথমে কারণ তার দরজা জানলা সব বন্ধ ছিল, বিড়াল তো দূরের কথা একটা টিকটিকিও ঘরের ভেতর আসার কথা নয়। তারপর হঠাৎ তিনি তার ঠিক পেছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করলেন। মনে হচ্ছে কেউ পিছন দিয়ে তার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখলেন কেউ নেই। তখন আবার যখন সামনে তাকালেন তখন আবার বিড়ালেরও কোনো খবর পেলেন না। তাড়াহুড়ো করে রুমের লাইট জালালেন। পুরো বাসার লাইট জালালেন,কিন্তু না! কোন বিড়াল নেই। তাহলে কি উনি ভুল দেখলেন?

চলবে….

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
3 Comments
Ecency