ধোঁয়াশা পর্ব ১

জীবনের শত চিন্তা দুশ্চিন্তার ফাঁদে পড়ে মানিক সাহেবের ঘুমের বারোটা বেজে গেছে। কিছুদিন ধরে রাত তিনটা চারটার আগে তার ঘুমই আসে না। তেমনি একদিন রাত দুইটার সময় সিগারেট হাতে নিয়ে বারান্দায় সুখ টান দিচ্ছিলেন, হঠাৎ করে সামনে বিল্ডিং এর ছাদে রেলিং এর উপর একটা কম বয়সী মেয়ের আকৃতির একটি মেয়ে রেলিং এর উপর উঠলো। প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কারণ অনেক সময় মানুষের হ্যালোসিনেশন হয়। কিন্তু পরে যখন ঠিকমতো দেখার চেষ্টা করলেন তখন বুঝতে পারলেন তিনি যা দেখছেন তাই সঠিক। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন একজন কম বয়সী মেয়ে রেলিনের উপর দাঁড়িয়ে গেল। উনি তখন নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে যত জোরে চিৎকার করা যায় চিৎকার করে আশেপাশে মানুষদের ডাকা শুরু করলেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে যা বিপদ হওয়ার হয়েই গেল। মেয়েটি সাততলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল।

একটি ১২ বছরের মেয়ের সুইসাইড করেছে। ভাবতেই কেমন লাগে তাই না? এলাকার সবাই যথেষ্ট চিন্তিত। কি এমন হলো যে মেয়েটি এত কম বয়সে সুইসাইড করল? পরে পুলিশ এসে জানাজানি হয় মেয়েটি একটি চিরকুট লিখে গিয়েছিল। সে চিরকুটে লেখা ছিল, " আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। আমার বাবা আমাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে, যা আমি এখন আর নিতে পারছি না। তাই আমার আর এই দুনিয়ায় থাকার কোন ইচ্ছা নেই। মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।ইতি, তোমাদের মেয়ে রিমি"। একজন বাবা কিভাবে তার মেয়েকে এভাবে ধর্ষণ করতে পারে! মানে এটা কি আদৌ সম্ভব! সাথে সাথেই বাবাকে জেল হাজতে দেওয়া হল। কিন্তু বাবার একটাই কথা উনি তার মেয়েকে কখনো এমন কিছুই করেননি। উনি নিজেও বুঝতে পারছেন না তার সব থেকে আদরের মেয়ে কেন মৃত্যুর আগে এ ধরনের চিঠি লিখে মারা গেল। ইভেন মেয়েটির মা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে রাজি নয় যে মেয়েটির বাবা এমন কাজ করতে পারে।

রিমির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও খুব একটা ভালো অবস্থায় লাশটি থাকে না। কিন্তু তারপরও যথেষ্ট ভালো তথ্য বের হয়ে আসে। বের হয়ে আসে যে রিমি আসলেই দীর্ঘদিন ধরে সেক্সুয়ালি একটিভ। রিমির বাবা একজন সাধারন স্কুল মাস্টার। খুব সাধারণ জীবন যাপন তার। তাদের বাসায় খুব আহামরি আসবাবপত্র নেই। আর এলাকায় যথেষ্ট তার নাম ডাক আছে মাস্টারমশাই হিসেবে। যথেষ্ট সম্মান আছে। মোট কথায় কেউই বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না যে আসলেই রিমির বাবা এমন কিছু করতে পারে। কিন্তু যাই হোক একটি মেয়ে মরার আগে সুইসাইড নোটে এই কথা লিখে গেছে অবিশ্বাস করারও তো কথা নয়।

আর এদিকে রিমির বাবা জেলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এক এ তো মেয়ের অকাল মৃত্যু শোক তার উপরে এই মিথ্যা বদনাম। উনি কোনভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিলেন না।না খেয়ে থাকতে থাকতে উনি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুই তিন দিন পরই উনি হার্ট অ্যাটাক এ মারা যান।

অন্যদিকে রিমির মা প্রায় পাগল হয়ে যাবার মত অবস্থা। একদিকে স্বামীর মৃত্যু অন্যদিকে মেয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত আত্মহত্যা। পুরো দুনিয়ায় যেন রীতিমতো হঠাৎ করে উনি একা হয়ে গেলেন। কে জানত তার জীবনে এরকম কাল বয়ে আসবে। কিন্তু ওনার কোনভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না রিমির বাবা এমন কিছু করতে পারে। আর যদি উনি নাও করে তাহলে কি করল? কে তার আদরের মেয়েকে এভাবে নির্যাতন করল? আর কেনই বা তার মেয়ে চিঠিতে নিজের বাবার ব্যাপারে এভাবে লিখল? উনার মাথা কোনভাবেই কাজ করছে না।

রিমির মা সালমা বেগম, খুবই বাজে দিন যাপন করছেন। ঘরে থেকে বাইরে স্বাভাবিক হয়ে বের হতে পারছেন না। বাজার করতে পারছেন না। যেখানেই যান মানুষজন হা করে তাকিয়ে থাকে। তার উপরে আত্মীয়-স্বজন ও খুব একটা খোঁজ খবর এখন আর নেয় না। শুধু তার বাপের বাড়ির লোকেরাই টুকিটাকি যা খোঁজ খবর নেয়। সালমার ভাই , রিমির মামা বাসায় এসেছেন। বোনের অবস্থা দেখে উনি আর থাকতে পারেননি। উনিও মেনে নিতে পারছেন না কিভাবে এসব ঘটে গেল। রিমি তার খুব আদরের বোনের মেয়ে ছিল। তাই উনি নিজে নিজে ঠিক করলেন যেভাবেই হোক এই রহস্য উনি বের করবেই।

H2
H3
H4
3 columns
2 columns
1 column
4 Comments
Ecency