This content was deleted by the author. You can see it from Blockchain History logs.

“কোটা আর বৈষম্য অতলে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা !!! ”

“কোটা আর বৈষম্য অতলে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা !!! ”
...... এস.এম. কামাল হোসেন
বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম সে একেবারে নেহাত কম নয় । শিশু,কৈশোর বয়স পেরিয়ে সে আজ পুরোপুরি যৌবন দীপ্ত যুবেকের টলমলে ৪৭’এর অধিকারী। এ বয়সে যে অভিজ্ঞতা,প্রজ্ঞা নিয়ে স্ব মহিমায় একটি সফল ও সার্থক রাষ্ট্র তার স্বরুপ বৈশিষ্ট্যে দ্যুতি ছড়ায় বাংলাদেশ তার থেকে (আমার দৃষ্টিতে) যোজন-যোজন মাইল দূরে অবস্থান করছে ।আর এ অবস্থানের অন্যতম একটি প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থা। আজকে আমি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশেষ করে “প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা”র বিশেষ কিছু ক্রুটি বিচ্যুতি জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই । তুলে ধরতে চাই এ জন্য যে দেশের আপমর সাধারণ মানুষ এ বিষয় একবারেই অবগত নন।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। এক কথায়- কোন ব্যক্তি, সমাজ, জাতি কিংবা রাষ্ট্র কতটা উন্নত তা তার শিক্ষা দিক্ষা দিয়ে পরিমাপ করলেই স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়। আর শিক্ষা সূচনা হয়ে একবারে শৈশবে। আর শৈশবে একটি শিশু যে শিক্ষা গ্রহণ করে তাকে বলে “প্রাথমিক শিক্ষা ”। এই শিক্ষাই হলো শিক্ষার ভিত্তি। কোন নির্মাণের ভিত্তি যদি শক্ত ও মজবুত না হয় তবে তা দৃঢ় ও সাসটেইনাবল হয় না। লোকে বলে, গোড়ায় যদি গলদ থাকে তবে সে কাজ কোনদিনই সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাই “প্রাথমিক শিক্ষা হলো” শিক্ষার ফাউন্ডেশন । তাই একে হতে হবে শুধু পরিকল্পিত নয় সু- পরিকল্পিত ও বাস্তব সম্মত এবং যুগোপযোগী।
আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় কয়েকটি স্তর বা ধাপ রয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা। যদিও সর্বশেষ শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতি শিক্ষার স্তর তিনটিতে বিন্যস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে তা অধরাই রয়ে গেছে ।
আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যেসব রাষ্ট্র উন্নতির স্বর্ণ শিখরে উপনিত হয়েছে তারা প্রত্যেকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দিকে উন্নত দৃষ্টি ভঙ্গি দেখিয়েছেন এবং এখনো দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এ সেক্টর টা বড়ই অবহেলিত ও নিষ্পেষিত। তদুপরি মিটি মিটি আলোর মত যতটুকু জ্বলতে জ্বলতে এগুচ্ছিল তাও আজকে বৈষম্যর কঠিন বিষবাষ্পে নিভে যাচ্ছে প্রায় । “বৈষম্য” একটি সামাজিক ব্যধি। কোন সমাজ, গোষ্ঠী যদি কাউকে হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অবদমনিত করে রাখে তখন তারই নাম বৈষম্য । বৈষম্য মানুষ কে কুড়ে কুড়ে খায়। বৈষম্যর আর নাম নরক যন্ত্রনা । আর নরক যন্ত্রণায় ভুগে মানুষ আর যাই হোক কাঙ্খিত শিক্ষা হতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠা পোষকতায় এ বিষবাষ্পের অন্তর জ্বালায় জ্বলছে এ সেক্টরে কাজ করা হাজারো ,লাখো জাতি গড়ার কারিগর। এখানে আজ সৃষ্টের দমন আর দুষ্টুকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে । করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ভাবে । বৃটিশদের অতি নিদারুণ নিষ্ঠুর নিয়ম ও কালা কানুন - “ডিভাইডেড এন্ড রুল” অর্থ্যাৎ ভাগ কর এবং শাসন কর আর এখানো তারই প্রতিফলন ভাগ কর ,বৈষম্য চালাও এবং দমন কর দিয়ে চলছে “বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা”। হয়ত আমার কোন পাঠক বন্ধু এরই মধ্যে আমার সাথে দ্বিমত করে ফেলেছেন। তাই আপনার মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, প্রাথমিক সেক্টরে মূলত দু’ধরণের শিক্ষক কাজ করার কথা । ১.প্রধান শিক্ষক এবং ২. সহকারী শিক্ষক । আর এই দুই ধরণের শিক্ষকের প্রত্যেকের গড়ন ও গঠনও হওয়া উচিত একবারে দুই ধরণের তাই নয় কী ? না, ভাই আমি কিন্তু চেহারা আর বৈশিষ্ট্য কিংবা লিঙ্গ নিয়ে কথা বলছি না । আমি বলছি এই যে, যারা এখানে “প্রধান শিক্ষক” হবেন তাদের প্রত্যেককে একটি নিদিষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠীর মাধ্যমে এখানে আসা উচিত। আবার এখানে “সহকারী শিক্ষক” যারা হবেন তাদের বেলাও ঐ একই নিদিষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠীর মাধ্যেমে এখানে আসা উচিত । অর্থ্যাৎ, একটি জাতীয় নিদিষ্ট যোগ্যতার মানদন্ডে এখানে স্ব গৌরবে সবাই খুশি মনে যার যার আপন পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে দেশ ও জাতি গড়ার মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করবেন যা আমাদের রাষ্ট্রীয় দলিলেও অন্তভূক্তি আছে।
অতিব পরিতাপের বিষয় ও বাস্তব সত্য হলো, এই সেক্টরে যারা কাজ করেনে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে সীমাহীন বৈষম্য । আর এই বৈষম্যর কারণে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বহুল সরকারি জনগোষ্ঠী “ প্রাথমিক স্তরের ” শিক্ষকের মাঝে আজ পাহাড় সম বৈষম্য জাল বিরাজ করছে।
এবার আসি “প্রধান শিক্ষক” দের বৈষম্যর মূল কারণ প্রধান শিক্ষকের প্রকারভেদ নিয়ে।
প্রাথমিক স্তরে প্রধান শিক্ষকের প্রকারভেদ :
১. বি সি এস থেকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া “প্রধান শিক্ষক”।
২. সরাসরি নিয়োগ পাওয়া ( সাধারণ কোটায় ) পুরুষ “প্রধান শিক্ষক”।
৩.সরাসরি নিয়োগ পাওয়া (৬০%মহিলা কোটায় ) মহিলা “প্রধান শিক্ষক”।
৪. সহকারি শিক্ষক থেকে পদোন্নতি পাওয়া (সাধারণ কোটায় ) পুরুষ “প্রধান শিক্ষক”।
৫.সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি পাওয়া (৬০% মহিলা কোটায়) মহিলা “প্রধান শিক্ষক”।
৬. সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের ( রেজি: বিদ্যালয়) “প্রধান শিক্ষক”।
৭. সহকারী শিক্ষক হতে প্রধান শিক্ষক পদে “চলতি দায়িত্ব পালন কৃত” পুরুষ “প্রধান শিক্ষক”।
৮ সহকারী শিক্ষক হতে প্রধান শিক্ষক পদে “চলতি দায়িত্ব পালন কৃত” মহিলা “প্রধান শিক্ষক”।
এবার পাঠক বন্ধু, এই আট(০৮) ধরণের “প্রধান শিক্ষক”এর সুখ দু:খের বিবরণ যদি উপস্থাপন করি তাহলে আপনি কী ধৈর্য্য ধরে শুনবেন ? তার আগে সহকারী শিক্ষকের প্রকার ভেদ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই ।
প্রাথমিক স্তরে সহকারি শিক্ষকের প্রকার ভেদ:
১. সরাসরি রাজস্বে নিয়োগ পাওয়া পুরুষ “সহকারী শিক্ষক”।
২.সরাসরি রাজস্বে নিয়োগ পাওয়া মহিলা “সহকারী শিক্ষক”।
৩.বিভিন্ন প্রকল্প ( যেমন: এ ডি বি, আই ডি এ, পি ডি ই পি-১,পি ডি ই পি-২,পি ডি ই পি-৩) নিয়োগ পাওয়া পুরুষ “ সহকারি শিক্ষক”।
৪.বিভিন্ন প্রকল্প ( যেমন: এ ডি বি, আই ডি এ, পি ডি ই পি-১,পি ডি ই পি-২,পি ডি ই পি-৩) নিয়োগ পাওয়া মহিলা “ সহকারি শিক্ষক”।
৪.নব সৃষ্ট রাজস্বে (৪০%সাধারণ কোটায়) নিয়োগ পাওয়া পুরুষ “ সহকারি শিক্ষক”।
৫. নবসৃষ্ট রাজস্বে (৬০%মহিলা কোটায় ) নিয়োগ পাওয়া “ সহকারি শিক্ষক”।
৬. সদ্য জাতীয়করণকৃত ( রেজি: বিদ্যালয়) “ সহকারি শিক্ষক ”।
৭. সদ্য জাতীয়করণকৃত ( কমিউনিটি বিদ্যালয় ) “সহকারী শিক্ষক”।
৮. ডি. সি ( জেলা প্রশাসক) বরাবর রেজি: বিদ্যালয়ে আবেদনকৃত থেকে প্যানেলকৃত থেকে মামালার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া “ সহকারী শিক্ষক”( পুরুষ ও মহিলা) ।
৯. প্যানেল ভুক্ত থেকে হাইকোট মামালায় বিজয়ী “সহকারী শিক্ষক”( পুরুষ ও মহিলা )।
১০. পুল শিক্ষক থেকে হাইকোট মামালায় বিজয়ী “সহকারী শিক্ষক”( পুরুষ ওমহিলা )।