View full version

মূল্যহীন অভিজ্ঞতা .

বর্তমান এই চাকরির বাজারে অভিজ্ঞতা জিনিসটা নতুনদের জন্য হয়ে উঠেছে গলার কাটা। কারন যে কোন চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে নিচে লিখে রাখে (experience Requirements: At least 3-6 years) or (0-3 years) .মানে একই জায়গায় ৩ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক দরখাস্ত করতে পারবেন আবার 6 বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক ও দরখাস্ত করতে পারবেন। কিন্তু এই সিভি গুলো দেখতেগেলে দেখা যায় অনেক ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকেরাও দরখাস্ত করে রাখছে। আর যে কোম্পনি গুলো লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিছে তারাও তখন বেছে বেছে ওই ৬ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকদেরই ডাকে। আর এই একই কাজটি করা হয় (০-৩ )বছরের ক্ষেত্রেও। নতুনদের কাজের জায়গায় সব অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করা হয়।

আর কোন কোম্পানি ৩ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক বাদ দিয়ে নতুন কোন কর্মী নিয়োগ দিবে না। কারন নতুন কর্মীকে কাজ শিখাইতে গেলে তাদের অনেক সময় লেগে যাবে। আর নতুন যে গুলো নিয়োগ হয় অধিকাংশ সুপারিশের ভিত্তিতে। বেতন ০ অভিজ্ঞাতর ক্ষেত্রে এখন আমাদের দেশের প্রাইভেট চাকরির জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেলে ৮ হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার পর্যন্ত। ১৫ হাজার সর্বোচ্চ। এমনকি ১৫ হাজার দিয়ে আমাদের দেশে ৩ বছর বা তারও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার পেয়ে যাবেন।


image source

বর্তমানে আমাদের দেশে আরেকটি নতুন একটি পদ্ধতি চালু করেছে। সেটি হল চুক্তি ভিত্তি চাকরি। সেখানে বেতন বেশি হলেও তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে কিছু টেকনিক থাকে। ২ বছরের জন্য তারা আপনাকে নিয়োগ করবে। কিন্তু এই ২ বছরে আপনার কোন বেতন বাড়বে না। ২ বছর পর তাদের প্রয়োজন হলে তারা আপনাকে আবার নিয়োগ করবে। কিন্তু তখন আপনাকে নিয়োগ করা হবে ৩ মাসের জন্য। এখানেও আপনার বেতন বাড়ানো হবে না। আর ৩ মাসের পর প্রয়োজন হলে আবার আপনাকে ৩ মাসের জন্য নিয়োগ করবে। আর এই চাকরিতে আপনাকে কোন প্রভিডেন্ট ফান্ড ও দেওয়া হবে না। আর ৩ মাস করে সময় বাড়ালে কোন বেতন বাড়ানো যায় না। কমপক্ষে একবারে ৬ মাস বাড়ালে কিছু বেতন বাড়াতে পারে কিন্তু তারা সেটা করবে না।
কোম্পানি গুলো এখন খুব টেকনিক করে চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। আগে তারা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে (০-২ বছর )লিখত। এখন সেখানে হয়েছে (০-৩)বছর। কারন ওই একই বেতন দিয়ে তারা ৩ বা তারও বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক তারা পেয়ে যাবে। আর (৫-৮) বছর অভিগ্গতা সম্পন্ন লোকদের বেতন শুরু হয় (১৮ -৩০ )হাজার।

কালকে ফেসবুকে একটি কোম্পনীর চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখছিলাম। সেখানে তারা ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার চেয়েছেন। অভিজ্ঞতা চেয়েছেন (৩-৬) বছর। বেতন ধরেছে ১২-১৫ হাজার। এই রকম আরো কিছু বিজ্ঞপ্তি দেখলাম সেগুলো প্রায় একই রকম। নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছিল। অভিজ্ঞতার কি কোন দামিই নাই।

কোন মানুষ ৬ বছর ধরে চাকরি করে। তার বেতন ১৬ হাজার টাকা। অবশ্য এর জন্য কোম্পানি দায়ী নয়। এখানে দেখবেন অনেকেই দরখাস্ত করবে। এখানে চাকরি করাও একটি কারন আছে। আমাদের দেশে অনেক কোম্পানি প্রতি মাসের বেতন সঠিক সময়ে দিতে চায় না। এর জন্য অনেকেই শুধু চাকরি পরিবর্তন করতে থাকে। আর এই সুযোগটি নেয় অনেক কোম্পানিগুলো।

২০২০ সালের প্রথম দিকে আমাদের দেশে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে প্রায় ১০০ জন সাইট ইঞ্জিনিয়ার জন্য একটি নিয়োগ বিজ্ঞতি ছাড়া হয়। বেতন ধরা হয়েছিল ১০ হাজার থাকা। তারা ফ্রেশ লোক দের কাজের জন্য চেয়েছিল। সরাসরি ভাইভা দিতে হবে। আমি আমার একজন পরিচিত মাধম্যে জানতে পারলাম সেখানে সকাল ১২ টা পর্যন্ত তারা প্রায় ৬০ জনের বেশি মানুষের ভাইভা নিয়েছেন। আর প্রায় সবাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক আর বাহিরে আরো প্রায় ১০০ জনের মত দাঁড়িয়ে আছে ভাইভা দেওয়ার জন্য।
অনেকদিন আগে একটি চাকরির ইন্টাভিউতে একজন ৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক এসেছিলেন। কিন্তু সেখানে চাওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ৫ বছর অভিজ্ঞতা। তার কাছে যখন জানতে চাওয়া হল আপনি কেন এখানে আসতে চাচ্ছেন আর এত কম বেতনে কাজ করবেন। তিনি বললেন স্যার বিগত চার মাস ধরে আমি অৰ্ধেক বেতন পাচ্ছি। এতে আমার সংসার চালাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমি আপনাদের কোম্পানি সম্পর্কে জেনে এখানে এসেছি। আমার এই বেতনে কোন সমস্যা নেই যদি আপনারা সঠিক সময়ে বেতন দেন।
আর এই কারণেই বর্তমানে চাকরির অভিজ্ঞতা একেবারেই মূল্যহীন হয়ে পরেছে। যাদের চাকরির কোন অভিজ্ঞতা নেই তারা অভিজ্ঞতা না থাকার জন্য চাকরি পাচ্ছে না আবার যাদের ভাল অভিজ্ঞতা আছে তারা তাদের অভিজ্ঞতার সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। যার কারনে তারা যে কোন জায়গায় যে কোন বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হয়ে পরেছে। আর নতুনদের কাজের জায়গা থাকছে না।